কুবি শাখা ছাত্রশিবিরের নীবন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম

কুবি থেকে মোঃ পায়েল হোসেন
নীবন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
নীবন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা কর্তৃক ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোজাম্মেল হোসেন আবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ব্যাংকিং এন্ড ইনসুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার চৌধুরী এবং প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুহতাসিম বিল্লাহ শাহেদী।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী ও শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কুবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাফেজ মাজাহারুল ইসলাম। িউক্ত অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন হৃদয় বলেন, 'বাহিরে একটা ফেস্টুন দেখলাম কেমন ছাত্রশিবির চাই? আমরা র‍্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। যেখানে তোমার হলো,তোমার ক্যাম্পাস তুমি তোমার মতো চলো এমন একটি এমন একটি ক্যাম্পাস চাই। আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস চাই যেখানে। আমরা সঠিক ক্যারিয়ার গাইডলাইন চাই। এসব আমরা ছাত্র শিবির থেকে প্রত্যাশা করি।

একই শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর সুমাইয়া ইয়াসমিন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় যেমন উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার স্থান। তেমনি এখানে ভালো ও খারাপ দুটি দিকই রয়েছে, এখান থেকে ভালো দিককে বেছে নিতে হবে। গঁদ বাধা রাজনীতির বাইরে যে সুন্দর ও চমৎকার জগৎ আছে যা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবির আমাদেরকে দেখিয়েছে।' বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশে ১৫ বছর ধরে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল। কিন্তু জুলাই মাসে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে দেশের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। অনেক ভাই শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, শহিদদের জান্নাত দান করুন, আর আহতদের দ্রুত সুস্থ করুন।'

তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রশিবির যদি সত্যিকারের ছাত্রবান্ধব কাজ করে, শিক্ষার্থীরা তা মূল্যায়ন করবে। আর যদি র‍্যাগিং চালু করে, জোর করে মিছিলে নেয় বা মাদক দেয়, তাহলে ছাত্ররাই ছাত্রশিবিরকে প্রত্যাখ্যান করবে। কাউকে জোর করে আটকানো যাবে না। ছাত্রশিবির যদি সত্যিকারের ছাত্রবান্ধব হয়, তাহলে ছাত্ররাই তা গ্রহণ করবে। আর যদি অন্যায় করে, তাহলে ছাত্ররাই তা প্রত্যাখ্যান করবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বন্ধু নির্বাচন। ভুল বন্ধু বেছে নিলে জীবনও ভুল পথে যেতে পারে। তাই আসুন, আমরা নিজেদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত করি।'

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুহতাসিম বিল্লাহ শাহেদী বলেন, 'একজন ব্যক্তির যেমন নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়া উচিত, ছাত্র শিবির একজন শিক্ষার্থীকে ঠিক তেমন গাইডলাইন প্রদান করে থাকে। সে যেন একজন পরিপূর্ণ নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, আমরা যদি ইন্টারন্যাশনাল ভাষা হিসেবে বলি তাহলে ইংরেজি ভাষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন আরবি ভাষায় রচিত। বিশ্বের অনেক দেশের অফিশিয়াল ভাষা, মুসলিম দেশের সাথে কানেক্টেড থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি আরবি ভাষা জানে তার সামনে দেড় হাজার বছরের জ্ঞান ভাণ্ডার উন্মুক্ত হয়ে যায়। কারণ কুরআন নাজিল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অপরিবর্তনীয়।

তিনি আরও বলেন, 'সিভিল সার্ভিসের স্বপ্ন দেখছেন তারা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় গ্যাপ রাখবেন না তাহলে আপনি দুই দিক থেকে বিপদে পড়বেন। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে অনেক নিচে। আমাদের যে একাডেমিক স্ট্রাকচার তা ব্রিটিশদের তৈরি। পশ্চিমা তাত্ত্বিকরা যে চিন্তা করছেন সেগুলো আমাদের পড়তে হয়, তাদের সমাজ নীতি রাষ্ট্রনীতি আমাদের ফলো করতে হয়। যেগুলোর আউটকাম আমাদের দেশে পর্যাপ্ত নয়। আমাদের নিজস্ব একাডেমিক স্ট্রাকচার দরকার, এই অবস্থার পরিবর্তন আমাদেরকে করতে হবে। আমাদের ইস্টের যারা স্কলার তাদেরকে আমরা খুব বেশি ব্র্যান্ডিং ও একাডেমিয়ার যুক্ত করতে পারিনি।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ব্যাংকিং এন্ড ইনসুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, 'এমন বাংলাদেশ স্বপ্নের বাংলাদেশ চাই যে বাংলাদেশ হাজার বছর আগে ছিল। আবার আমাদেরকে সেখানে পৌঁছাতে হবে, যে বঙ্গদেশে পৃথিবীর মোট জিডিপির ১২.৫% একাই জোগান দিত। যে দেশে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আফ্রিকান, অস্ট্রেলিয়ান, ইউরোপীয়ান, ফারসি এবং মোঘলরা এসেছিল। সারা দুনিয়া ভাগ্য পরিবর্তনে এদেশে আসার চেষ্টা করেছে, আমরা কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করতাম না। ইংরেজদের বাণিজ্য ইতিহাসে লেখা আছে যদি ভাগ্য পরিবর্তন চাও তাহলে উন্নত অঞ্চলে যাও, ইংরেজরা ঠিকই তা খুঁজে পেয়েছিল এ অঞ্চলকে। আসার পর আর যেতে চায়নি একটানা ২০০ বছর রয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের উৎপাদিত আবিষ্কারের সেরা মসলিন উৎপাদন করত বাংলা যা পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশ এখন পর্যন্ত কপি করতে পারেনি। অধিকাংশ উন্নত দেশের ফসল উৎপাদন হয় বছরে একবার। আর আমাদের দেশে ফসল হয় তিন থেকে চারবার। আমাদের এত পরিমাণ সম্পদ রয়েছে যা গোপন করা হয়েছে। ব্রিটিশরা যখন নিশ্চিত হলো তারা হেরে যাচ্ছে। এই দেশ ছাড়ার আগে তারা একটামাত্র ছুরি দিয়ে আমাদের খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলল সেই ছুরি হলো 'ডিভাইডেট এন্ড রুলস'। এতটা ভাগে আমাদের বিভক্ত করল যে আমরা একজন ভাই আরেকজন ভাইয়ের মাংস খেতে চেয়েছিলাম, এরপর আমরা গরিব হয়ে গেলাম।'

জুলাই বিপ্লবের বিষয়ে তিনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলন তোমরাই আমাদের পথ দেখিয়েছিলে, কোনো বৃদ্ধ আমাদের পথ দেখায় নাই। আমরা তোমাদের দেখানো পথে হাঁটতে চাই। তোমরা পথ তৈরি করবে আমরা সে পথ অনুসরণ করব।'

কুবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি হাফেজ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা নবীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত বেশি ভালোবাসা পাবো ভাবি নাই। রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা প্রায় আটশো ছাড়িয়ে গেছে। আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন  সবাইকে ছাত্রশিবির করতেই হবে বা শিবিরের কার্যক্রমের সাথে একমত হতেই হবে এমন কোনো কথা নাই। কিন্তু দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং নিজে সৎ থাকার ক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের সাথে একমত হলেই হবে। কারণ ছাত্রশিবির সততা ও দেশপ্রেমে বিশ্বাসী। সর্বোপরি যারা উপস্থিত থেকে আজকের প্রোগ্রামকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন সবাইকে মুবারক বাদ জানাচ্ছি।'

সম্পর্কিত