দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আবারও অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে যেমন উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে স্পষ্ট উদ্বেগ ও দ্বিধা।
অনেকেই এটিকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি সম্ভাবনাময় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি নতুন করে অস্থিরতা ও সংঘাত তৈরি করতে পারে।
শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন রাকসু নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মের সেই ঘাটতিটা পূরণ হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল বারিক বলেন, "রাকসু আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। এটি নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে আমাদের নানা ধরনের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বা গুরুত্ব পাচ্ছে না। আবাসন সংকট, লাইব্রেরির পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব, ক্যাম্পাসের রাস্তার বেহাল দশা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, খাদ্যদ্রব্যের মান ও দাম-এসব বিষয়ে আমাদের বক্তব্য পৌঁছানোর কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই।"
তিনি আরও বলেন, "রাকসু সক্রিয় হলে এসব নানাবিধ সমস্যা ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হবে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে। আমরা চাই, রাকসু রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো একটি প্ল্যাটফর্ম হোক।"
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করছেন, রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির নামে আবার দখলবাজি ও সহিংসতা ফিরে আসতে পারে, যা শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে পারে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, "রাকসুতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের জীবনে এটাই প্রথম রাকসু নির্বাচন। আমরা চাই এমন কেউ ক্ষমতায় আসুক যারা কোনো রাজনৈতিক দল থেকে আসলেও তাঁরা দল-মতের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করবে। কোনোভাবেই রাকসু লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংসদ হবেনা। আমরা আশা করছি রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রভাব কমবে এবং এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের যে রাজনৈতিক শুন্যতা তৈরি হয়েছে সেটা পুরন করবে।"
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেলি মুত্তাকি বলেন, "ছাত্রদের নেতৃত্ব থাকা দরকার, কিন্তু যদি সেটা আবারও দলীয় নেতাদের দখলে চলে যায়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হবে না। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, শুধু প্রতিনিধিত্ব চাই।"
অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্বাস করেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে রাকসু হতে পারে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মুখপাত্র, তবে শর্ত একটাই-রাজনৈতিক দখল ও দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে এই সংগঠনকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ দ্বিধান্বিত এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে। একদিকে নেতৃত্ব ও অধিকার চর্চার প্রত্যাশা, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রভাব ও দখলদারিত্বের ভয়। তবে সুস্পষ্টভাবে একটি কথা উঠে আসছে শিক্ষার্থীদের মুখে-তারা নেতৃত্ব চান, তবে তা যেন হয় গণতান্ত্রিক।
রাকসু নির্বাচন কেবল একটি ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া নয়, এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীরা আশা করছে, এই নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক চর্চার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং প্রকৃত অর্থে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।