রাকসু নির্বাচনে ডোপ টেস্টসহ আচরণবিধি

তাজনিন নিশাত ঋতু
ফাইল ফটো। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
ফাইল ফটো। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি নতুন আচরণবিধি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ কার্যকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই আচরণবিধি কার্যকর থাকবে।

মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিয়মাবলি 
নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী আরোপ করেছে। প্রার্থীরা নিজে অথবা তাদের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে, এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য প্রার্থীর সশরীরে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো, ডোপ টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ না হলে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

সুশৃঙ্খল প্রচারণার নির্দেশনা
নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের ২৪ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। শুধুমাত্র সাদা-কালো পোস্টার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার আকার ৬০ সে.মি. × ৪৫ সে.মি. এর বেশি হতে পারবে না। কোনো ভবনের দেয়ালে নির্বাচনী লেখনী বা পোস্টার লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রচারণার সময় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা ভোটারকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বলপ্রয়োগ বা ভোটদানে বাধা দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একাডেমিক ভবন বা শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে মিছিল/সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর, অশালীন বা উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, তা পরিহার করতে হবে। ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যক্রমও পরিচালনা করা যাবে না। প্রার্থী পরিচিতি সভা ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, এবং আবাসিক হলের অভ্যন্তরে কোনো মিছিল করা যাবে না।

যানবাহন ও প্রবেশাধিকারে নিয়ন্ত্রণ
মনোনয়নপত্র জমাদান, প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় মোটরসাইকেল, রিক্সা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি সহ কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে শোভাযাত্রা বা মিছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বা ভোটারদের আনা-নেওয়ার জন্য কোনো প্রকার যানবাহনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ। তবে, প্রার্থী, ভোটার ও শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বাই-সাইকেল ও রিক্সা ব্যবহার করে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন।

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ভোটাররা নিজ নিজ হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে প্রবেশ করতে পারবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট (যাদের অবশ্যই ভোটার হতে হবে) এবং প্রধান রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারলেও, বুথের অভ্যন্তরে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোনসহ সকল ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে, এবং বুথের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ডিভাইস ব্যবহার বা ছবি/ভিডিও ধারণ করা যাবে না। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে ভোটার, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ করা যাবে না।

নিরাপত্তা ও নিষিদ্ধ কার্যক্রম
নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ কোনো প্রকার অস্ত্র বহন করতে পারবে না।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের কঠোর শাস্তি
নির্বাচনবিধি লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সকল প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এই কঠোর পদক্ষেপগুলি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত