শ্রাবণী রায় পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে। বাবা প্রকৌশলী ও মা গৃহিণী। শ্রাবণী রায়ের উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। তিনি ফার্মেসি বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করে ২০১৫ সালে একটি ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেন। তবে তাঁর ভেতরের উদ্যোক্তা সত্তা তাঁকে বেশি দিন বাঁধতে পারেনি। মাত্র দেড় বছরের মাথায় তিনি চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০১৭ সালে তিনি অনলাইনে অম্বরের যাত্রা শুরু করেন। ব্যবসার শুরুর দিকে তাঁকে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। সন্তান হওয়ার কারণে কিছুদিনের জন্য ব্যবসা থেকে বিরতি নিতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং ব্যবসার প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি থেমে থাকেননি।
২০২১ সাল থেকে নতুন উদ্যমে শ্রাবণী আবার তাঁর ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২০২৩ সালে তিনি তাঁর প্রথম শোরুম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম শোরুম দেন ঢাকার মিরপুরে। পরের শোরুম দেন ঢাকার উত্তরা, বেইলি রোড ও মোহাম্মদপুরে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, শার্টসহ সব পণ্যই তৈরি করে বিক্রি করেন। নিজস্ব ডিজাইনারের পাশাপাশি নিজেই নকশা করেন শ্রাবণী। কারখানা দিয়েছেন মিরপুরে। ফ্যাক্টরি ও শোরুম মিলিয়ে ১০০ জন কর্মী কাজ করছেন।
ব্যবসার পরিধি বাড়াতে মূলধনের প্রয়োজন ছিল। সেই সময় ব্র্যাক ব্যাংক শ্রাবণী রায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে তিনি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকার এসএমই ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ ছিল, যা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল। প্রথম দিকে আমার একটু জড়তা ছিল। এত টাকা লোন নেব, দিতে পারব কি না। অনেক কাগজপত্রের বিষয় ছিল। আমি যখন ব্র্যাক ব্যাংকের মিরপুর শাখার সঙ্গে কথা বলি, তখন আমাদের তারা বেশ সহায়তা করে। সবকিছু মিলিয়ে ১০ দিনের মধ্যেই আমার লোনের কাজকর্ম শেষ হয়ে যায়। এই ঋণ আমার ব্যবসাকে নতুন গতি দেয়।
শুরুতে টাংগাইল থেকে শাড়ি এনে নিজস্ব মেধা দিয়ে ডিজাইন করেন। বিক্রি করে, জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরবর্তীতে যে পণ্য নিয়ে কাজ করেছিলেন তা হল একটি কামিজের উপর নিজস্ব ডিজাইন করা। সে কামিজটিও বিক্রি হয়ে যায়। এরপর কিছু স্যাম্পল বানিয়ে তার ছবি ফেসবুক পেইজে দিয়ে দেন। তা ক্রেতাদের খুব পছন্দ হয়েছিল এবং দ্রুত সাড়াও পাচ্ছিলেন। তারপর পরিবারের সবাই পরামর্শ দেয়, যেভাবেই হোক এ ব্যবসা যেন বজায় রাখতে পারেন তিনি। তবে ২০১৮ সালে এসে সন্তানের মা হওয়ার পরিস্থিতিতে খানিকটা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়িক কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল তার। প্রায় এক বছরের মত সন্তানের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পরে আবার কোভিড-১৯ এর ঝামেলা। এভাবেই মূলত ব্যবসায় বাধাগ্রস্ত হতে থাকেন তিনি। কিন্তু এরপরেও কখনো হাল না ছেড়ে নিজেকে বারবার বুঝিয়ে হলেও ব্যবসায় আবার উঠে দাঁড়ান উদ্যোক্তা শ্রাবণী রায়। এ বছরের শুরুতে তিনি রি-লঞ্চিং করেছেন পেজটিকে।
উদ্যোক্তা শ্রাবণী নিজের ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, এরইমধ্যে ডিজাইন স্টুডিওর কাজ শেষ করেছি। এরপরও এই পেজটির যে পণ্যগুলো প্রদর্শন করে যাচ্ছি। যেমন শাড়ি, জামা, শাল, থ্রি পিস, তরুণীদের সুন্দর ডিজাইনের কুর্তি, কটি, শীতের সময় শীতের গায়ের চাদর, ব্লাউজ পিস, ব্লক প্রিন্টের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের তরুণীদের আকর্ষণীয় পণ্য। এমন ডিজাইনে বল করে তুলি পণ্যগুলো। যাতে অন্যান্য জায়গায় পাওয়াটা খুব মুশকিল হয়ে পড়বে মনে করি ক্রেতাদের।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় আমার পণ্য যায়। কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে থাকি। তাই এখন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ইনকাম হয়। ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি তাই আবার নতুন করে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ পড়াশোনা শুরু করেছি। নতুন নতুন কাপড় ডিজাইন করাটা অনেক আনন্দ দেয় আমায়। আসলে দেশীয় কাপড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই অম্বরের জন্ম।