হাবিপ্রবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি।
নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন । ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন । ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ের লেভেল ১ সেমিস্টার ১ এ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ টি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিটোরিয়াম-১ এ আজ সকাল ১১ টায় কৃষি অনুষদ ও বিকেল ৪ টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ এবং অডিটোরিয়াম-২ এ দুপুর ১২.৩০ টায় ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদ ও বিকাল ৬ টায় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা, গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হল সুপার কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. আবু সাঈদ মন্ডল, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস.এম. এমদাদুল হাসান, সংশ্লিষ্ট অনুষদের সকল বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রমে সভাপতিত্ব করেন স্ব স্ব অনুষদের সম্মানিত ডীনবৃন্দ। 

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয় এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ সময় নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক অনুষদের দুজন করে শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি স্ব স্ব অনুষদের পক্ষ থেকে একাডেমিক বিষয়সহ অনুষদের বিস্তারিত পরিচিতি তুলে ধরা হয়। 

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, প্রক্টর ও পরিচালক (ছাপনিবি) মহোদয়গণ নিজ নিজ বক্তব্যে নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন উপদেশ ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। 

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার বেরোবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা তোমাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে হাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়েছো এজন্য তোমাদের অভিনন্দন জানাই। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অগ্রযাত্রা সেটি শুধু একাডেমিক অ্যাটমসফিয়ারের দিক দিয়েই নয়, গবেষণায়ও অনেক ভালো করছে। তিনি আরও বলেন, তোমরা এখানে নিজের পছন্দে ভর্তি হয়েছো। আমরা গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও ভর্তি কার্যক্রমই শুরু করতে পারিনি। সেদিক থেকে তোমরা ভালো পর্যায়ে আছো। আজ থেকে তোমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশ, তাই আমি আশা করি এখন থেকে তোমরা এখানকার নিয়ম কানুন মেনে চলবে। ট্রেনে উঠলে ট্রেন যেমন তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবেই, আজ থেকে তোমরা ট্রেনে উঠেছো, জীবনের এই ট্রেন যেন কোনভাবেই লাইনচূত না হয় সেদিকে তোমাদের নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, এটা জুলাই মাস, এখন থেকে এক বছর আগে যাঁদের কারণে আমরা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত-স্বাধীন হতে পেরেছিলাম, আমি তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। যারা শাহাদাৎবরণ করেছেন মহান আল্লাহ্ যেন তাঁদের জান্নাত দান করেন। সেই আন্দোলনে তোমরাও অনেকেই হয়তো ছিলে, তোমাদের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন। পরিশেষে তিনি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য হাবিপ্রবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা নবীন শিক্ষার্থী ও উপস্থিত অভিভাবকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জুলাই মাসের আজকের দিনে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ আবু সাঈদ কে, যাঁর রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, একইসাথে গত বছরের জুলাই-আগস্টে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, অনেকে আহত হয়ে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন, আমি তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরাও অনেকেই এই আন্দোলনের সাথে ছিলে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে তোমরা সেই আন্দোলনকে সফল করেছো। যাঁরা শহীদ হয়েছেন তারা জীবিত থাকলে হয়তো হাবিপ্রবিতেই কেউ না কেউ ভর্তি হতেন, আজ তোমাদের পাশেই কেউ হয়তো বসে থাকতো। তিনি বলেন, শহীদ আবু সাঈদ’র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আমি আজকের অনুষ্ঠানে বেরোবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন,এ বছর গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসায় আমরা গত বছরের চেয়ে তিন-চার মাস আগে ক্লাস শুরু করতে পেরেছি। এটা তোমাদের শিক্ষা জীবনের মূল্যবান একটা সময় সাশ্রয় করবে এবং পরবর্তী জীবনে তোমরা এর উপকারিতা পাবে। 

তাই উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে মনে করি। আজকের ওরিয়েন্টেশনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তোমাদের পরিচিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই চার-পাঁচ বছর তোমাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে, সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। ক্লাস, পরীক্ষার হল, ছাত্রাবাস, লাইব্রেরী এসবের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবে, অন্যান্য কাজ করার জন্য জীবনে অনেক সময় পাবে। তাই এই সময়টার সঠিক মূল্যায়ন না করলে তোমাদের পরবর্তী জীবনটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে। এ সময় তিনি র‌্যাগিং এর বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হাবিপ্রবিতে র‌্যাগিং এর কোন স্থান নেই, এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। কেউ র‌্যাগিং এর সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি এবং প্রয়োজনে দেশের আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিশেষে তিনি সুন্দরভাবে ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রমে নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি সংক্রান্ত স্মরণিকা, প্যাড, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত কলম, ক্লাস রুটিন ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রদান করা হয়।উল্লেখ্য, আগামীকাল অডিটোরিয়াম-১ এ সকাল ৯.৩০ টায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, ১১.৩০ টায় সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিস অনুষদ, বিকাল ৪ টায় বিজ্ঞান অনুষদ এবং অডিটোরিয়াম-২ তে বিকাল ৫.৩০ টায় ফিসারিজ অনুষদের ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত