নোবিপ্রবিতে গ্রিনহাউসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইসমাইল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
উপাচার্য অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইসমাইল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের উপর জলবায়ুর প্রভাব নিরুপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল নির্বাচন’ প্রকল্পের আওতায় একটি আধুনিক গ্রিনহাউস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আজ সোমবার (০৪ আগস্ট ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইসমাইল প্রধান অতিথি হিসেবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন,এই গ্রিনহাউস শুধু একটি অবকাঠামো নয়-এটি আধুনিক গবেষণাকেন্দ্র হবে। যেখানে আবহাওয়া সংবেদনশীল কৃষি উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল তৈরি হবে। ফসলের বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এ অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার যে সমস্যা রয়েছে তার সমাধানে আমাদের লবণ সহিষ্ণু ফসল উৎপাদন করতে হবে। এখানে গ্রিনহাউস নির্মাণের ফলে গবেষণার যে হাব সৃষ্টি হবে তাকে ধরে রাখতে হবে। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং লবণাক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ গবেষণাটির যে ফাইন্ডিংস্ সেটাকে যদি আমরা মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি তখনই এর সুফল পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস্ সফরে আমরা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ডেল্টারেজ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের সঙ্গে যৗথ আলোচনায় অংশ নিয়েছি। সেখানে এ অঞ্চলে লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যৌথ গবেষণার মাধ্যমে কিভাবে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি আশা করি এ সকল যৌথ গবেষণা স্থানীয় জনগনের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্পের প্রাপ্ত ফলাফল নোবিপ্রবিকে গবেষণায় যেমন সমৃদ্ধ করবে একই সঙ্গে এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে একটি অনন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।

পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী মো. মহসিনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত অভিযোজন কৌশল নির্ধারণ ও কৃষিক্ষেত্রে টেকসই সমাধান উদ্ভাবনই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড। যার আওতায় দুই বছর মেয়াদি (২০২৪-২০২৬) এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৫৭-২০০১ সালের আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে ২১০০ সাল পর্যন্ত সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস তৈরি করা হচ্ছে। এসব পূর্বাভাসের ভিত্তিতে গ্রিনহাউজের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে (যেখানে আলো, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণযোগ্য) বিভিন্ন ফসলের অভিযোজন, বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা পর্যালোচনা করা হবে। গবেষণায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মিলেট জাতীয় খাদ্যশস্যের ওপর। যেগুলো খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু এবং ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

সম্পর্কিত