অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোজাম্মিল হুসাইন সাইমনের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাদিক শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মুমিন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, সাইমন একজন মেধাবী প্রোগ্রামার ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি ওয়েব ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বাউনিয়া এলাকা থেকে স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনে সিটিটিসির সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ব্লগার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মানবন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, গ্রেপ্তারের পর সাইমনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া, শরীরের জয়েন্টে আঘাত করা এবং ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখার মতো অমানবিক আচরণ করা হয়। সাইমনের ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন অভিযোগ করেন, স্বীকারোক্তিতে সই না করলে তার বাবা ও ভাইকে গুমের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। নিরুপায় হয়ে সাইমন সিটিটিসির তৈরি স্বীকারোক্তিতে সই করতে বাধ্য হন।
এই স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করেই ২০২১ সালে তাকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ মামলায় কোনো প্রকৃত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি, বরং একটি সাজানো নাটকের মতোই তাকে জড়িয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার বলেন, “একজন মেধাবী ছাত্রকে শুধুমাত্র ধর্মীয় চর্চা করার কারণে জঙ্গি তকমা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমরা দ্রুত তার মামলার পুনঃতদন্ত দাবি করছি।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, “সাইমন আমাদের বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। সে একজন ভালো প্রোগ্রামার এবং নৈতিকভাবে দৃঢ়চেতা ছিল। তার অপরাধ শুধু একটাই—সে ছিল একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম। এই কারণেই হয়তো তাকে ‘জঙ্গি’ বানিয়ে নির্যাতনের শিকার করা হয়েছে। আমরা চাই, এই মামলার পূনঃতদন্ত হোক এবং নির্দোষ হলে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।”
মানববন্ধন থেকে দ্রুত মামলার পূনঃবিচার ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাইমনের মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া, আইনগত সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অংশগ্রহণকারীরা।