মো: বাদল মিয়া। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (মেধাক্রম: ৯০তম)। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা শরীয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারবুনিয়া ইউনিয়নে। তিনি আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ,চাঁদপুর থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ (৯ম ব্যাচ) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়ের গল্পের কথা জানিয়েছেন ক্যাম্পাস রিপোর্ট কে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো: রাশেদুজ্জামান রাশেদ।
শৈশব- কৈশর কোথায় কেমনে কেটেছে আপনার?
মো: বাদল মিয়া: শৈশব কেটেছে গ্রামেই। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী প্রত্যন্ত একটি গ্রাম যেখানে বিদ্যুৎ এসেছে ২০১৯ সালে।
আপনি কখন থেকে উপলব্ধি করলেন যে বিসিএস দেওয়া প্রয়োজন?
মো: বাদল মিয়া: অনার্স থার্ড ইয়ারের শেষ দিকে।
কখনো কি ভেবেছিলেন যে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিবেন?
মো: বাদল মিয়া: অনার্স থার্ড ইয়ারের আগে ভাবিনি।
পড়াশোনার জন্য আপনার দৈনিক রুটিনটা কেমন ছিল?
বাদল মিয়া: একেক জনের পড়াশুনার ধরন একেক রকম। আমি সাপ্তাহিক/ মাসভিত্তিক টার্গেট ফিক্স করে নিতাম। চেষ্টা করতাম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টপিক/সাবজেক্ট শেষ করার। টার্গেট পূরণ না হলে অনেক সময় অতিরিক্ত এফোর্ট দিতে হতো।
আপনি কোন বিষয়টি কঠিন মনে করতেন এবং কিভাবে সেটি মোকাবেলা করতেন?
মো: বাদল মিয়া: আমি ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিভীতি ছিলো, যেমনটা সবার থাকে। প্রস্তুতির শুরু থেকেই প্রতিদিন অন্তত একঘন্টা ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। এছাড়া ইংরেজি ভুকাবুলারি শেখার জন্য এক বন্ধুর পরামর্শে ওয়ার্ড স্মার্ট পড়েছি।
এমন কোন বই বা মেটেরিয়ালস আছে কিনা যেটি আপনার সাফল্যে অবদান রেখেছে বলে আপনি মনে করেন?
মো: বাদল মিয়া: বিসিএস প্রস্তুতির জন্য এক-দুটি বইয়ের উপর নির্ভর করলে হয় না। তবে প্রতিদিন পত্রিকা পড়া উচিত। মাসিক বুলেটিন থেকে পত্রিকার ফ্লেভার পাওয়া যায় না। ম্যাথে ভালো করার জন্য নবম-দশম শ্রেণির জেনারেল ও উচ্চতর গণিত বই থেকে প্র্যাকটিস করা দরকার। ইংরেজি টিভি সিরিজ দেখলেও প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে। মাঝে মাঝে প্রবন্ধ/ উপন্যাস পড়া যেতে পারে। Paulo Coelho-এর '' The Alchemist '' বইয়ের একটি উক্তি আমার প্রস্তুতিকে বেগবান করেছে-“When you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it.”
লিখিত পরীক্ষার জন্য আপনার কোন বিশেষ কৌশল ছিল কিনা?
মো: বাদল মিয়া: আমি হাতের লেখা পরিষ্কার ও ডেকোরেটিভ রাখার উপর বিশেষ নজর দিয়েছিলাম এবং পাশাপাশি পরিচিত এক ভাইয়ের লেখার ধরন অনুসরণ করেছি যা হয়তো রিটেনে ভালো নাম্বার পেতে সাহায্য করেছে। নিয়মিত পত্রিকা পড়া বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
আপনি কতবার বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছেন?
মো: বাদল মিয়া: আমি চারটি বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছি। যার মধ্যে প্রথম বিসিএস-এ পরিসংখ্যান ক্যাডার পাই। পরবর্তী দুইটা বিসিএস-এ নন-ক্যাডার হই। চতুর্থ বিসিএস-এ এসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।
ভাইবা বোর্ডের আবহাওয়া ও পরিবেশ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন....
মো: বাদল মিয়া: চারটি ভাইভার মধ্যে ৪৪তম ভাইভা বোর্ড খুব বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। আমার প্রতিটি উত্তর মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।
কোন প্রিয় ব্যক্তিত্ব আছে কিনা যাকে দেখে আপনি সিভিল সার্ভিসে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
মো: বাদল মিয়া: প্রস্তুতির শুরুর দিকে প্রশাসন ক্যাডারের মোহাম্মাদ ইউসুফ (Bansuri M Yusuf) স্যারের অনলাইন এক্টিভিটিগুলো অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এজন্যই প্রশাসন ক্যাডার প্রথম পছন্দ দেওয়া। তবে পুরো জার্নিতে আমার মা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। “বাবা, মেজিস্ট্র্যাট হওয়ার রেজাল্ট কবে দিবে?” এই জিজ্ঞাসাটিই আমাকে প্রশাসন ক্যাডার বানিয়েছে।
ভবিষ্যতে যারা সিভিল সার্ভিসে আসতে চান তাদের জন্য আপনার কি কি উপদেশ থাকবে?
মো: বাদল মিয়া: যারা সিভিল সার্ভিসে আসতে চান তাদের উচিত নিজেকে সমৃদ্ধ করা। সেটা নলেজ কিংবা এক্সটার্নাল এক্টিভিটি দুটোই হতে পারে।