কানাডা আমেরিকাসহ বিশ্বের যত দেশ ঘুরেছি, সব জায়গায় একই সিস্টেম দেখেছি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার পরিবেশ এবং শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করেনা কেউ। বড় খেলার মাঠ এবং খোলামেলা পরিবেশ ছাড়া কোনো স্কুলের অনুমতি দেয়া হয় না। সেখানে অবশ্যই গাছপালা লাগাতে হবে।দুটি স্কুলের ছবি দিলাম। আমাদের স্কুলের খেলার মাঠ হচ্ছে গ্যারেজ। আমাদের কারিকুলাম হচ্ছে ব্যাগ ভর্তি বইয়ের ভারে ছোট বাচ্চাদের মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া।
আমরা ছোট বেলায় বড় মাঠ পেয়েছি। সরকারি কলোনির প্রতি চার বিল্ডিং এর মাঝে ছিল খেলার মাঠ।আফসোস! আর দুর্ভাগ্য আমাদের এই যুগের বাচ্চাদের। তারা জানে না, তাদের এই জীবনে কী হারিয়েছে তারা। বাবা মায়েরা কখনোই আর দেখবে না, সবুজ ঘাস আর গাছে ভরা মাঠে খেলা, তাদের বাচ্চাদের চোখে মুখের আনন্দ আর উচ্ছ্বাস।
আমাদের বাচ্চাদের আনন্দ এখন ডিজিটাল ডিভাইস, মোবাইল আর টিভি। সাথে চিপস আর জাংক ফুড। প্রতিটি বাসা, এক একটি ফার্ম হাউজ। যেখানে বেঁধে রাখা সব ফার্মের মুরগি।কিশোর গ্যাংয়ে ভরা দেশ আমার। কেউ নেই দেখার।এখানে একটু পরপর পার্ক। সমস্ত ফুটপাতে একটু পরপর বসার জায়গা। পৃথিবীর সব গাছ মনে হয় কানাডায়। অথচ এদের প্রায় সব বাড়ি ঘর কাঠের তৈরি। পুরো শহর গ্রামের ১১ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের খাম্বা সব কাঠের। এরা একটা গাছ কাটলে, চারটা লাগায়।
প্রতিটি পার্কে বা বসার জায়গায় ঘাস দিয়ে ভরা উঁচু ঢিবি বানিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি, ঢিবি কেন। পরে এক জায়গায় দেখলাম ছোট বাচ্চারা উপর থেকে নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তখন বুঝলাম, কেন ঢিবি বানিয়ে রাখা হয়েছে সব বসার জায়গায়। আমার ছবির পিছনে দেখুন।
আপনি যেখানেই অনুভব করবেন, একটু বসা দরকার, সেখানেই দেখবেন বসার ব্যবস্থা। যেখানেই ফিল করবেন আপনার পানি খাওয়া দরকার, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবেন পানির কল। যেখানেই মনে করবেন টয়লেট বা ওয়াশরুম দরকার, দেখবেন সামনেই সেই ব্যবস্থা এবং পরিস্কার ঝকঝকে সেই ওয়াশরুম। লিকুইড সাবান, টিস্যু পেপার, সব আছে। সমস্যা একটাই। হ্যান্ড শাওয়ার নেই। বড় কাজে বিপদ।রীতিমতো রিসার্চ করে মানবিক চাহিদা আর কল্যাণের ব্যবস্থা করেছে এরা।
আমাদের বাবা মায়েদের প্রতি অনুরোধ। যদি সামান্য সুযোগ থাকে, ঈদ বা বড় ছুটিতে বাচ্চাদের গ্রামে নিয়ে যাবেন। ওদের এতবড় আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন না৷ একবার নিয়ে যান, দেখবেন তাদের বড় না হওয়া পর্যন্ত বারবার নিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে। আমাদের হাতে বাচ্চাদের জন্য আর কোনো অপশন নেই যে!
কানাডায় বেড়াতে এসে একটা জিনিস অবজার্ভ করলাম। দেশে পরিচিত কেউ তো দেখি বাকি নেই, যাদের বাচ্চা আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় পাঠায়নি।